Advertisement |
- সাকিবের ফিরলে সমস্যা কেটে যাবে, মাশরাফির আশাবাদ
- ২৮ ক্রিকেটার খেলানো অস্থার অভাবের কারণে মনে করেন না তিনি
- তরুণদের নিয়ে আশাবাদী মাশরাফি
- ত্রিদেশীয় সিরিজে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৮২ রানে অলআউট হওয়াটা বড় ধাক্কা
প্রশ্ন: দেশের মাঠে অপ্রতিরোধ্য দল বলে বাংলাদেশের যে একটা গর্ব ছিল, সেটা কি এই এক মাসে ম্লান হয়ে গেল?
মাশরাফি বিন মুর্তজা: এই একটা সিরিজ দিয়ে
বিচার করা ঠিক হবে না। কিছুটা অন্যায়ও হবে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও আমরা
সিরিজ হেরেছিলাম, আফগানিস্তানের সঙ্গে একটা ম্যাচ হেরেছিলাম। কিন্তু ওই সময়
অনেকগুলো ম্যাচ খেলেছিলাম ঘরের মাঠে, প্রতিনিয়ত পারফরম করার সুযোগ ছিল।
এখানে আমরা পাঁচটি ওয়ানডে খেলেছি, এটা নিয়ে কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না।
টেস্ট সিরিজ, টি-টোয়েন্টিতেও হেরেছি। তবে সর্বশেষ চার-পাঁচ মাস আমরা আমাদের
মতো পারফরম করতে পারিনি, দক্ষিণ আফ্রিকায়ও পারিনি। আমাদের দুর্বলতাগুলো
খুঁজে বের করে ফিরে আসার চেষ্টা করতে হবে।
প্রশ্ন: ত্রিদেশীয় সিরিজের পর টেস্ট আর টি-টোয়েন্টিতে কি বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়ে গেছে বলেই অচেনা মনে হচ্ছে বাংলাদেশকে?
মাশরাফি: ওয়ানডেতে কিন্তু
পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছিল না। ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে সাকিব খেলতে না পারার
পর থেকেই মূলত ওটা শুরু হয়েছে। সাকিবের অভাব পূরণ করতে গেলে এমনিতেই দুজন
খেলোয়াড় লাগে। ওই দুজন মিলেও সাকিবের মতো হবে কি না, সেটাও চিন্তার বিষয়।
সবকিছু মিলেই কিন্তু একটা অস্থিরতা তৈরি হয়।
প্রশ্ন: ত্রিদেশীয় সিরিজ আর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ মিলিয়ে ২৮ জন ক্রিকেটারকে খেলানো হয়েছে। এটাকে কি ক্রিকেটারদের ওপর আস্থার অভাব বলবেন?
মাশরাফি: আমার সেটা মনে হয়নি। কারণ, আমি
টি-টোয়েন্টি সিরিজের আগেই শুনেছিলাম, কয়েকজন নতুন খেলোয়াড়কে সুযোগ দেওয়া
হবে। ২০২০ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আছে, আমাদেরও কিছু ঘাটতি আছে
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটারের। এখন থেকে গুছিয়ে নেওয়ার একটা চেষ্টা ছিল। এ
পর্যন্ত বার্তাটা সবাই ঠিকঠাকই পেয়েছে। বাড়তি যেটা যোগ হয়েছে, সেটা সাকিবের
চোটের কারণে। সাকিবের অভাব পূরণে দুজন লেগেছে, দুজন করে নতুনকে দেখতে
চাওয়া হয়েছিল। সবকিছু মিলে একটা অস্থিরতা গিয়েছে। সাকিব ফিরলে এই অস্থিরতা
থাকবে না। এখন পারফরম্যান্সের দিকে মনোযোগী হওয়াটাই জরুরি।
প্রশ্ন: ছয় ক্রিকেটারের অভিষেক হলো টি-টোয়েন্টি সিরিজে। কতটুকু প্রতিশ্রুতিশীল মনে হয়েছে তাঁদের দেখে?
মাশরাফি: এক ম্যাচ দেখে আসলে প্রতিভা
নিয়ে কথা বলাটা কঠিন। প্রতিভা আছে বলেই তারা জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছে। তারা
নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কী। স্টেডিয়ামভর্তি মানুষ,
পরিবার, নিজের প্রত্যাশা মিলিয়ে যে একটা স্নায়ুচাপ তৈরি হয়, সেটা নিশ্চয়ই
টের পেয়েছে। ক্যারিয়ারের শুরুতেই যেহেতু এটা বুঝতে পেরেছে, সেভাবেই নিশ্চয়
নিজেদের তৈরি করবে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশ দলে আসার জন্য অপেক্ষমাণ খেলোয়াড়দের নিয়ে কতটা আশাবাদী আপনি?
মাশরাফি: আমরা খুব দ্রুত আশাবাদী হই, খুব
দ্রুতই আবার হতাশ হই। আমি আমাদের অনূর্ধ্ব-১৯ দল নিয়ে আশাবাদী। হয়তো ওরা
এখনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য প্রস্তুত নয়। এই ১৮-১৯ বছর বয়সেই
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আসলেই কঠিন। যদি না আপনি সাকিব-তামিমের মতো হন। তারাও
অবশ্য তখন এখনকার মতো ছিল না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উন্নতি করেছে,
বিশ্বসেরাদের কাতারে নিজেদের নিয়ে গেছে। অনূর্ধ্ব-১৯ দলই আমাদের ভবিষ্যৎ।
আমাদের কাজ হচ্ছে তাদের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে প্রস্তুত করে তোলা, যাতে লম্বা
সময় ধরে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা তো শ্রীলঙ্কান স্পিনারদের সামনেই ধসে পড়লেন। অথচ আমাদের তো স্পিন খেলে অভ্যাস আছে...
মাশরাফি: শেন ওয়ার্ন বা মুত্তিয়া
মুরালিধরনের সামনে আমাদের কিন্তু সংগ্রামই করতে হয়েছে। স্পিন যে আমরা খুব
ভালো খেলি, সেটা কিন্তু নয়। ভালো উইকেটে হয়তো আমরা স্পিন ভালো খেলি।
অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের সঙ্গে যেমন খেলেছিলাম। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তামিম
সেঞ্চুরি করল, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৮০ (দুই ইনিংসে ৭১ ও ৭৮) করল। এ রকমই
কিছু ইনিংসে আমরা জিতেছিলাম। এই সিরিজে দৃশ্যপটটা অন্য রকম ছিল। শুধু
তামিমের কাছ থেকে আশা করে গেলেও তো কঠিন। সাকিব থাকলে হয়তো অন্য রকম হতে
পারত। আমরা সে সুযোগটা পাইনি তার চোটের কারণে। আমাদের জন্য একটা হতাশাজনক
সময় গিয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাসী যে, এটা আমরা কাটিয়ে উঠতে পারব।
প্রশ্ন হচ্ছে, কত দ্রুত আমরা সেটা পারব?
প্রশ্ন: প্রতিপক্ষ বিবেচনায় নিয়ে উইকেট
তৈরি করা হয়। যে উইকেটে সারা বছর হয়তো ক্রিকেটাররা খেলেন না। সেই উইকেটগুলো
ঘরোয়া ক্রিকেটেও থাকাটা জরুরি কি না?
মাশরাফি: ঘরোয়া ক্রিকেটে এক রকম উইকেটই
বানাতে পারবেন, সেটা হচ্ছে স্পিন-সহায়ক উইকেট। বাংলাদেশের আবহাওয়ার কারণে
আপনি চাইলেও পেস বোলিং সহায়ক উইকেট তৈরি করতে পারবেন না। তৈরি করলেও সেটা
হয়তো দুই ঘণ্টা পেসারদের সহযোগিতা করবে। এরপরই আবহাওয়ার বদলের সঙ্গে সঙ্গে
ভিন্ন আচরণ করা শুরু করবে। যেটা হতে পারে, সেটা হলো স্পিনিং ট্র্যাক,
যেহেতু আমরা ঘরের মাটিতে ওই ধরনের উইকেটে খেলি। তা ছাড়া অনুশীলনের জন্য
আপনি পেস-সহায়ক উইকেট তৈরি করতে পারেন। চার দিনের ম্যাচে এগুলো করা কঠিন।
প্রশ্ন: কদিন পরই শ্রীলঙ্কায় নিদাহাস ট্রফি। এখন যা অবস্থা, তাতে দল কীভাবে অনুপ্রাণিত হতে পারে?
মাশরাফি: সাকিব ফিরে আসবে, এটা আমাদের
জন্য সুসংবাদ। তার মানে এই নয় যে সাকিব ফিরলেই আমরা সব ম্যাচ জিতে যাব। তবে
আমার বিশ্বাস, আগামী তিন-চার মাস পর আমাদের যে খেলাগুলো আছে, সেগুলোতে
আমরা ভালো করতে পারব। তবে সে জন্যও আমাদের অনেক কষ্ট করতে হবে।
প্রশ্ন: ক্রিকেটারদের চিন্তার মধ্যে কোনোভাবে হাথুরুসিংহে রয়ে গিয়েছিলেন কি? যেহেতু তিনি অনেক কিছুই জানতেন তাঁদের সম্পর্কে?
মাশরাফি: ওয়ানডে সিরিজ পর্যন্ত যতটুকু
আমি ছিলাম, ড্রেসিংরুমে কারও চিন্তায় হাথুরু ছিলেন না। কিন্তু সবার মনের
ভেতরে ঢুকে তো বলা কঠিন যে হাথুরু কাজ করছেন কি না? হয়তো আমরা খুব কঠিন সময়
পার করেছি দক্ষিণ আফ্রিকায়। তারপর তো তিনি চলেই গেলেন। বিসিবিও অনেক
চেষ্টা করেছে রাখার, তিনি তাঁর দেশের হয়ে কোচিং করাতে চেয়েছেন। তাঁর জায়গা
থেকে ঠিকই আছেন হয়তো-বা। সবাই নিজের দেশের প্রতিনিধিত্বই করতে চায়।
প্রশ্ন: বোর্ড সভাপতি বলেছেন, এই সিরিজে একজন হেড কোচের অভাব তিনি অনুভব করেছেন। ড্রেসিংরুমে কি সেই অভাবটা বোধ করেছিলেন?
মাশরাফি: ক্রিকেটে একজন হেড কোচ তো থাকেনই। তাঁর
পরিকল্পনা অনুযায়ী ক্রিকেটাররা খেলে। হাথুরুসিংহে যখন চলে যান, তখন
সর্বাত্মক চেষ্টা করা হয়েছিল তাঁকে রাখার। তিনি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে
দেওয়ার পর কয়েকজনের সাক্ষাৎকারও নেওয়া হয়েছিল। চেষ্টা হয়েছিল, কিন্তু হয়তো
সম্ভব হয়নি কোনো কারণে। ওই সময় বলতে পারেন কোচিং নিয়ে একটা বিপদেই ছিল
বাংলাদেশ। তারপর তো সুজন ভাই (খালেদ মাহমুদ) টিম ডিরেক্টর হলেন। তারপরও
আমরা কিন্তু ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। প্রথম তিনটা ম্যাচ আমরা ঠিক পথেই
ছিলাম। হয়তো-বা চার নম্বর ম্যাচটায় ৮০ রানে (আসলে ৮২) অলআউট হওয়াটা আমাদের
বড় একটা ধাক্কা দিয়েছে। তারপর থেকে পুরোটা সময়ই আমাদের কঠিন সময় পার করতে
হয়েছে। আমাদের যখনই যে কোচ দেওয়া হয়েছে, তাঁর পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলার
চেষ্টা করেছি।
0 comments: