Advertisement |
শীতের সকাল। কুয়াশা তখনো কাটেনি।
বান্দরবানের গহিন থানচির এক সিঁড়ির দিকে যেতে যেতে দেখি, ছোট-বড় অনেক পাথর।
পাহাড়ে জন্মেছি বলে এটুকু জ্ঞান আমাদের আছে, ‘যেখানে পাথর আছে, সেখানে
পানি আছে।’ তাই নিশ্চিত হলাম, পানির জন্য আমাদের এই অভিযান বিফল হবে না।
আমরা পানির উৎস খুঁজে পাবই।
পাহাড়ের ওপরে উঠতে উঠতে অনেক বড় বড় পাথরের সন্ধান পেলাম। পাথর যেমন বড় বড়, আশপাশে বিভিন্ন প্রজাতির বড় বড় বৃক্ষও দেখতে পেলাম। বড় বড় গাছের সঙ্গে ঝোলানো একধরনের বড় বড় লতা দেখলাম। যে লতা ধরে ‘টারজান’ এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে চলে যেত! জঙ্গলি একধরনের পামগাছও দেখা গেল। এর সঙ্গে বড় বড় বেতগাছ। কিন্তু লোকজনের দেখা নেই। পাহাড়ের ওপরে উঠতে উঠতে পানির শব্দ আরও স্পষ্ট শুনতে পেলাম। আমাদের তিনজনের মুখের হাসিটা ক্রমেই বড় হতে লাগল।
সত্যিই পানির দেখা মিলল। পেয়ে গেছি পানি!—চিৎকার করেই দেখতে পেলাম, পানির মধ্যে কাঁকড়া, শামুক আর মাছদের মুক্ত খেলাধুলা! এত সুন্দর একটি দৃশ্য অন্যদের জানানো উচিত! আমাদের একজন ফেসবুকে ছবি দিয়ে ফেলল ‘পানি পেয়েছি’ শিরোনামে!
সেখান থেকে আরও একটু যেতেই একটি জুমঘর। বাঁশের চাল দিয়ে তৈরি জুমঘরটি অপূর্ব! তখন প্রায় দুপুর ১২টা। কিন্তু সূর্যের আলোর দেখা নেই। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম আজ এই জুমঘর পর্যন্তই। আরেক দিন পানির মূল উৎসে যাব। অভিযান অসমাপ্ত রেখে আমরা তিনজন চলে এলাম।
পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা গত ১৫ জানুয়ারি একই পাহাড়ের পানির মূল উৎসের সন্ধানে বের হলাম। এবার আমরা ছয়জন। ওই জায়গায় পা ফেলতেই আমাদের মন খারাপ হয়ে গেল। প্রায় এক মাস আগে আমরা জঙ্গল কেটে রাস্তা করে পথ তৈরি করেছি, আজ পথ তৈরি করাই আছে! ১০ কদম হাঁটতে গিয়ে অবাক হলাম গাড়ির চাকার চিহ্ন দেখে। আরও দুই মিনিট হেঁটে গিয়ে দেখলাম বিশাল ধ্বংসযজ্ঞ! পাথরের সারি সারি স্তূপ! বড় বড় গাছ কেটে সাবাড়! বিস্ময়ে আমরা বিমূঢ়!
এই ধ্বংসযজ্ঞ দেখে আমাদের পা আর চলছিল না। আমাদের দলটাকে দেখে সেখানকার শ্রমিকেরা থমকে গেল। এত শীতেও তাদের শরীর থেকে ঘাম ঝরছিল! আমরা তাদের সঙ্গে কোনো কথা বলিনি। তাদের কোনো ছবিও আমরা তুলিনি। কারণ, মূল হোতা তো আর শ্রমিকেরা নয়!
আমরা পানির মূল উৎস খুঁজে পেলাম। এই পাহাড়ের ছোট ছোট ঝরনা দেখলাম। স্বচ্ছ ও শীতল পানি। মনে হয়, সূর্যের আলো পড়ে না কোনো দিন। আমরা এর মধ্যে ওখানকার স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁরা জানিয়েছেন, এ পাহাড়ে ছোট বাঘ, ছোট ভালুকের দেখা মেলে মাঝেমধ্যে! ওই জায়গায় সূর্যের আলো পড়তে হয়তো আর বেশি দিন লাগবে না! কারণ, প্রায় এক মাসের মধ্যে যে ধ্বংসযজ্ঞ আমরা দেখেছি, আর কয়েক মাস পর কী হবে, তা অকল্পনীয়! এই জায়গা খুব বেশি দূরে নয়। বলীপাড়া-থানচির মাঝামাঝিতে।
বলতে গেলে আমরা হিমালয় জয় করলাম। কিন্তু মনের মধ্যে হিমালয় জয়ের মতো তেমন অনুভূতি ছিল না। ঝিরিতে ঢোকার পথে যে ধ্বংসযজ্ঞ দেখলাম, সেটা শুধু পাথর বা বৃক্ষকে হত্যা করেনি, আমাদের ভেতরকার আনন্দকে হত্যা করেছিল।
মং মং সিং
বান্দরবান
পাহাড়ের ওপরে উঠতে উঠতে অনেক বড় বড় পাথরের সন্ধান পেলাম। পাথর যেমন বড় বড়, আশপাশে বিভিন্ন প্রজাতির বড় বড় বৃক্ষও দেখতে পেলাম। বড় বড় গাছের সঙ্গে ঝোলানো একধরনের বড় বড় লতা দেখলাম। যে লতা ধরে ‘টারজান’ এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে চলে যেত! জঙ্গলি একধরনের পামগাছও দেখা গেল। এর সঙ্গে বড় বড় বেতগাছ। কিন্তু লোকজনের দেখা নেই। পাহাড়ের ওপরে উঠতে উঠতে পানির শব্দ আরও স্পষ্ট শুনতে পেলাম। আমাদের তিনজনের মুখের হাসিটা ক্রমেই বড় হতে লাগল।
সত্যিই পানির দেখা মিলল। পেয়ে গেছি পানি!—চিৎকার করেই দেখতে পেলাম, পানির মধ্যে কাঁকড়া, শামুক আর মাছদের মুক্ত খেলাধুলা! এত সুন্দর একটি দৃশ্য অন্যদের জানানো উচিত! আমাদের একজন ফেসবুকে ছবি দিয়ে ফেলল ‘পানি পেয়েছি’ শিরোনামে!
সেখান থেকে আরও একটু যেতেই একটি জুমঘর। বাঁশের চাল দিয়ে তৈরি জুমঘরটি অপূর্ব! তখন প্রায় দুপুর ১২টা। কিন্তু সূর্যের আলোর দেখা নেই। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম আজ এই জুমঘর পর্যন্তই। আরেক দিন পানির মূল উৎসে যাব। অভিযান অসমাপ্ত রেখে আমরা তিনজন চলে এলাম।
পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা গত ১৫ জানুয়ারি একই পাহাড়ের পানির মূল উৎসের সন্ধানে বের হলাম। এবার আমরা ছয়জন। ওই জায়গায় পা ফেলতেই আমাদের মন খারাপ হয়ে গেল। প্রায় এক মাস আগে আমরা জঙ্গল কেটে রাস্তা করে পথ তৈরি করেছি, আজ পথ তৈরি করাই আছে! ১০ কদম হাঁটতে গিয়ে অবাক হলাম গাড়ির চাকার চিহ্ন দেখে। আরও দুই মিনিট হেঁটে গিয়ে দেখলাম বিশাল ধ্বংসযজ্ঞ! পাথরের সারি সারি স্তূপ! বড় বড় গাছ কেটে সাবাড়! বিস্ময়ে আমরা বিমূঢ়!
এই ধ্বংসযজ্ঞ দেখে আমাদের পা আর চলছিল না। আমাদের দলটাকে দেখে সেখানকার শ্রমিকেরা থমকে গেল। এত শীতেও তাদের শরীর থেকে ঘাম ঝরছিল! আমরা তাদের সঙ্গে কোনো কথা বলিনি। তাদের কোনো ছবিও আমরা তুলিনি। কারণ, মূল হোতা তো আর শ্রমিকেরা নয়!
আমরা পানির মূল উৎস খুঁজে পেলাম। এই পাহাড়ের ছোট ছোট ঝরনা দেখলাম। স্বচ্ছ ও শীতল পানি। মনে হয়, সূর্যের আলো পড়ে না কোনো দিন। আমরা এর মধ্যে ওখানকার স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁরা জানিয়েছেন, এ পাহাড়ে ছোট বাঘ, ছোট ভালুকের দেখা মেলে মাঝেমধ্যে! ওই জায়গায় সূর্যের আলো পড়তে হয়তো আর বেশি দিন লাগবে না! কারণ, প্রায় এক মাসের মধ্যে যে ধ্বংসযজ্ঞ আমরা দেখেছি, আর কয়েক মাস পর কী হবে, তা অকল্পনীয়! এই জায়গা খুব বেশি দূরে নয়। বলীপাড়া-থানচির মাঝামাঝিতে।
বলতে গেলে আমরা হিমালয় জয় করলাম। কিন্তু মনের মধ্যে হিমালয় জয়ের মতো তেমন অনুভূতি ছিল না। ঝিরিতে ঢোকার পথে যে ধ্বংসযজ্ঞ দেখলাম, সেটা শুধু পাথর বা বৃক্ষকে হত্যা করেনি, আমাদের ভেতরকার আনন্দকে হত্যা করেছিল।
মং মং সিং
বান্দরবান
0 comments: