Friday, March 23, 2018

মৃত্যুসংবাদ জানাবেন কীভাবে?

ad300
Advertisement
প্রিয়জনের মৃত্যুর সংবাদ শোকসন্তপ্ত পরিবারকে কীভাবে জানাবেন? তাঁদের কীভাবে বললে অকল্পনীয় গভীর বেদনা সামলাতে সাহায্য করবে, সেটা অনেক ক্ষেত্রেই একটা কঠিন চ্যালেঞ্জ। এই ভয়াবহ সংবাদ কাছের মানুষের মানসিক ভারসাম্যে কতটুকু প্রভাব ফেলবে, সে আশঙ্কাও থেকে যায়।
কাছের মানুষকে মৃত্যুসংবাদ কীভাবে জানাবেন?
মানসিক প্রস্তুতি
*প্রথমে ঘটনার আবহ সম্পর্কে হালকাভাবে জানান (যেমন ব্যক্তি অসুস্থতায় মারা গেলে তার অসুখের খবর বা দুর্ঘটনায় মারা গেলে সেই খবর)।
*ধীরে ধীরে ঘটনার গুরুত্ব তুলে ধরুন (যেমন অসুস্থতা এত বেশি ছিল যে হাসপাতালে নিতে হয়েছে। দুর্ঘটনা খুব গুরুতর ছিল)।
*এ রকম একটা ঘটনায় কী কী হতে পারে, সেটা তার মুখে শুনতে চান।
*এরপর তাকে মৃত্যুর সংবাদটি ‘ধীরে ধীরে’, ‘স্পষ্টভাবে’ বলুন।
*ক্ষেত্রবিশেষে ঘটনার ছবি, পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ দেখানো যেতে পারে। সত্য যত কঠিনই হোক, তত সুস্পষ্টভাবে প্রিয়জন জানবে, সত্যকে গ্রহণ করা এবং মেনে নেওয়া তত সহজ হবে।
*মৃত্যুর খবর দেওয়ার পর প্রিয়জনকে তার স্বাভাবিক আবেগ প্রকাশ করতে সাহায্য করুন।
*এ সময় এই হারানোর কষ্টে সমব্যথী অন্যরা কাছে থাকুন, নিজেদের কষ্ট প্রকাশ করুন, শেয়ার করুন।
*এ সময় যতটা সম্ভব এ গভীর বেদনায় সমবেদনা প্রকাশ করুন (তার হাত ধরুন, জড়িয়ে ধরুন, কান্না পেলে কাঁদুন)।
শোকসন্তপ্ত ব্যক্তিকে প্রিয়জনের মৃত্যু মানিয়ে নিতে সাহায্য করবেন কীভাবে?
মৃত্যুর কারণে প্রচণ্ড মর্মপীড়া একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। এই প্রচণ্ড শোক ব্যক্তি তার পরিবার, বন্ধুবান্ধব, ধর্মীয় দর্শন ইত্যাদির সহায়তায় বিশেষ কয়েকটি ধাপের মধ্য দিয়ে গিয়ে মানিয়ে নেয়।
শোকের পর্যায়
প্রথম পর্যায়: (কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিন) মৃত্যুর ঘটনা অস্বীকার বা বিশ্বাস না করা। এ সময় আপনজন একরকম অনুভূতিহীন, অবাস্তব অনুভব অথবা বিশ্বাস বা অবিশ্বাসের মাঝামাঝি অবস্থার মধ্যে যেতে পারে।
দ্বিতীয় পর্যায়: (সাধারণত কয়েক সপ্তাহ থেকে ছয় মাস) ভীষণ কষ্ট, কান্নাকাটি করা মৃত ব্যক্তিকে ফিরে পাওয়ার ব্যাকুলতা, একাকিত্ব, নিদারুণ শূন্যতা। এ ছাড়া মৃত ব্যক্তির প্রতি ঠিকমতো দায়িত্ব পালন না করতে পারার অপরাধবোধ, অন্যদের প্রতি রাগ বা অন্যকে অভিযুক্ত করাও থাকতে পারে।
তৃতীয় পর্যায়: ওপরের উপসর্গগুলোর তীব্রতা ধীরে ধীরে কমে আসে এবং প্রিয়জন হারানোর গভীর বেদনা মেনে নিয়ে পুনরায় জীবনমুখী হয়।
শোক যাতে সে স্বাভাবিকভাবে মানিয়ে নিতে পারে, সে জন্য তিনটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ:
*মৃত ব্যক্তিকে হারানোর ঘটনাটি সম্পূর্ণ সত্য ও বাস্তব বলে গ্রহণ করা।
*শোকের উপরিউক্ত ধাপগুলোর ভেতর দিয়ে যাওয়া।
*মৃত ব্যক্তিকে ছাড়া জীবনকে মানিয়ে নেওয়া।
এ ক্ষেত্রে শোকগ্রস্ত ব্যক্তিকে সাহায্য করতে পারেন যেভাবে-
*তাঁর প্রিয়জন ‘হারানো’ নিয়ে কথা বলতে দিন।
*তার মর্মবেদনা, অপরাধবোধ, রাগ, কষ্ট যা কিছু অনুভব করে, সেটা প্রকাশ করতে দিন।
*মৃত ব্যক্তির মরদেহ দেখা, তাঁর ব্যবহার্য জিনিস নাড়াচাড়া করা বা গুছিয়ে রাখতে সাহায্য করুন।
*কিছু বাস্তব বিষয়, যেমন অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া, জানাজা, মিলাদ মাহফিলের আয়োজন ইত্যাদি নিয়ে শোকগ্রস্ত ব্যক্তির সঙ্গে আলোচনা এবং যতটা সম্ভব তাকে যুক্ত করুন। এ ধরনের কাজকর্ম ব্যক্তিকে মৃত্যুকে মেনে নিয়ে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে সাহায্য করবে।
*সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শোকসন্তপ্ত ব্যক্তিকে তার সামাজিক যোগাযোগ বা মেলামেশা পুনরায় শুরু করা, অন্য ব্যক্তিদের সঙ্গে তার হারানো নিয়ে কথা বলা, জীবিত অবস্থায় মৃত ব্যক্তির সঙ্গে আনন্দঘন সময়, যা তাকে নানাভাবে পরিপূর্ণ করেছে সেসব বিষয় নিয়ে স্মৃতিচারণায় সাহায্য করুন।
শোক কখন ‘স্বাভাবিক’ নয়?
*শোকের প্রথম ধাপ যদি মৃত্যুর দুই সপ্তাহের মধ্যেও না ঘটে
*শোক ছয় মাসের বেশি সময় ধরে চলা অথবা শোক ১ম ও ২য় ধাপেই আটকে থাকা
*মৃত ব্যক্তির স্মৃতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব জিনিস সব সময় এড়িয়ে চলা
*শোকের অস্বাভাবিক প্রকাশ (যেমন অতিরিক্ত কর্মচাঞ্চল্য, বৈরিতা, উত্তেজনা, সামাজিকভাবে নিজেকে সম্পূর্ণ সরিয়ে নেওয়া)
যা করবেন না:
*হঠাৎ করে খারাপ খবর দেবেন না।
*খবরটা দেওয়ার সময় খুব তাড়াহুড়া করবেন না বা খুব বেশি দেরি করবেন না
*মৃত্যুর খবর দেওয়ার সময় কোনো সত্য গোপন বা অস্পষ্টতা রাখবেন না
*মিথ্যা আশ্বাস দেবেন না
*আবেগ প্রকাশে বাধা দেবেন না
*মৃত ব্যক্তির স্মৃতি প্রিয়জনের কাছ থেকে লুকানো বা দূরে রাখার চেষ্টা করবেন না।
প্রিয়জনের সঙ্গে বাহ্যিক সম্পর্কের সব যোগসূত্রের ইতি টানে ‘মৃত্যুসংবাদ’। তবে পরম সত্য হলো, গভীর মর্মবেদনা পার করে আমরা বেশির ভাগ মানুষই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মেনে নিই প্রিয় ব্যক্তিকে ছাড়া জীবনযাপন, তাল মেলাই জীবন নামক অদ্ভুত খেলার ছন্দে। আর এই ছন্দে আবারও যোগ হয় নতুন আনন্দ, নতুন বেদনা। একটা কথা মনে রাখা ভালো, মৃত্যু বাহ্যিক সম্পর্কের ইতি টানলেও জীবনকালে প্রিয়জনের সান্নিধ্য যে আত্মিক পূর্ণতা দিয়েছিল, মৃত্যুর ঘটনা কিন্তু সেটা বিনষ্ট করে না, অনেক ক্ষেত্রে সেই পূর্ণতাবোধ তার অনুপস্থিতিতে অদ্ভুত শক্তিও জোগায় বৈকি।
Share This
Previous Post
Next Post

Pellentesque vitae lectus in mauris sollicitudin ornare sit amet eget ligula. Donec pharetra, arcu eu consectetur semper, est nulla sodales risus, vel efficitur orci justo quis tellus. Phasellus sit amet est pharetra

0 comments: